শরণার্থীদের ঠেকাতে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কে ধর্মঘট করেছেন ইয়েমেনি অভিবাসীরা।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা থেকে ছয় ঘণ্টা শহরের হাজারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তারা ট্রাম্পের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্পের ওই আদেশে যে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ইয়েমেন তার একটি।
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো হলের সামনে ইয়েমেনি অভিবাসীদের বিক্ষোভ।
ধর্মঘট চলাকালে ইয়েমেনি অভিবাসীদের প্রতিটি দোকানের সামনে ট্রাম্পবিরোধী পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন দেখা যায়। পরে ব্রুকলিন বরো হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইয়েমেনের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা এ সময় ‘নো ব্যান নো ওয়াল, ইউএস ফর অ্যল’, ‘লেট দেম ইন’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।
১৯৯৮ ও ২০০৭ সালে ইয়োলো ট্যাক্সি চালকদের ধর্মঘটের পর গত তিন দশকে নিউ ইয়র্কে তৃতীয় ধর্মঘট এটি। এ ধর্মঘটে অন্য দেশের অভিবাসী এবং স্থানীয়দেরও ব্যাপক সমর্থন দেখা যায় বলে নিউ ইয়র্কের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সন্ত্রাস দূরে রাখার কথা বলে মুসলিম অধ্যুষিত ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন থেকে আসা যে কারও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
তার ওই নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী কর্মসূচি ১২০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সিরিয়ার শরণার্থীদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা চলবে ‘পরবর্তী আদেশ না দেওয়া’ পর্যন্ত।
ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী আদেশের প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো হলের সামনে সমাবেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত-নাগরিক ও গ্রিন কার্ডধারীরাও (স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত) ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের আওতায় পড়েছেন।
ওই আদেশের পর দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনা চলছে। ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মত মিত্র দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের বিরোধিতা করেছে।
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের সফর ঠেকাতে দশ লাখের বেশি মানুষ একটি পিটিশনে সই করেছেন। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে ‘বেআইনি’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
আদেশের পরদিনই নিউ ইয়র্কের এক ফেডারেল বিচারক অভিবাসী বিষয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের একটি অংশের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, বৈধ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের পৌঁছানো কাউকে ওই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিমানবন্দরে আটক বা ফেরত পাঠানো যাবে না।
এক যৌথ বিবৃতিতে ১৬ জন ডেমোক্রেট অ্যাটর্নি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে ‘অসাংবিধানিক, অ-আমেরিকান ও বেআইনি’ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।
শরণার্থী ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো হলের সামনে বিক্ষোভ।
বৃহস্পতিবারও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ নিয়ে পাঁচটি রাজ্যে এ ধরনের মামলা হল।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে প্রতিবাদে প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। বৃহস্পতিবার টেক্সাসের হিউস্টন সিটিতে বিক্ষোভে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক মেক্সিকান ও স্প্যানিশ অভিবাসী। নির্বাহী আদেশের পর অনিবন্ধিত অভিবাসীদের ঢালাও গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের নিন্দা জানান তারা।
No comments:
Post a Comment